বেলজিয়ামের গয়েট গুহায় প্রাপ্ত ভালুকের ফসিল নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলছে বিজ্ঞানীদের। আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল প্রাপ্ত ভালুকের খাদ্যাভ্যাস থেকে নতুন কিছু তথ্য জানিয়েছেন আমাদের।
তারা মূলত ভালুকের ফসিলে যে কোলাজেন রয়েছে তার আইসোটোপের গঠন থেকে ঐ প্রাণীটির খাদ্য তালিকায় কি কি ছিল তা নিয়ে গবেষণা করেছেন।
কোলাজেন হচ্ছে এমন একটি প্রোটিন যা গঠন করে আমাদের হাড়, দাঁতের কিছু অংশ, চামড়া এবং টেনডন তৈরিতে সহায়তা করে। এটি অ্যামাইনো এসিডের মিশ্রণে গঠিত যা পরীক্ষা করার মাধ্যমে কোন প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হতে পারে তা জানা যায়।
প্রায় অর্ধটন ভর বিশিষ্ট এবং বিশাল দন্তময় এই মেরুভালুকের মুখের গঠন থেকে জানা যায় যে এটি বরফ যুগের একজন অন্যতম একটি প্রজাতি ছিল। যদিও এই প্রজাতির ভালুকদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে তারা সর্বভূক কিন্তু এই ফসিলের আইসোটোপ পরীক্ষা করে জানা যায় যে, তার খাদ্য তালিকায় যে সকল খাদ্য ছিল তার বেশিরভাগই হচ্ছে সবজি। অর্থাৎ, এটি একটি শাকাহারী প্রজাতির প্রাণী।
গবেষণা মতে আরো জানা যায় যে এই প্রাণীটির মৃত্যু হয়েছে আজ থেকে প্রায় ২৫০০০ বছর আগে। সর্বশেষ গ্ল্যাসিয়াল যুগের একটি প্রজাতি ছিল এটি। সে সময়কার মেরু ভালুকরা হরিণ ও মাছ শিকার করার মাধ্যমেই
তাদের ক্ষুধা নিবারণ করত। কিন্তু প্রাপ্ত ফসিলটি থেকে জানা যায় সে লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকত।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন অন্য কথা। বেলজিয়ামের টিউবেনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, “হয়ত মাত্রাতিরিক্ত লতাপাতার ওপর নির্ভর করার কারণে হয়ত তাদের বিলুপ্তির কারণটা আরো বেশি ত্বরান্বিত হয়েছে।” কারণ হিসেবে তারা জানান, শাকসবজি ভক্ষণ করার ফলে এদের পরিবেশের সাথে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হয়ত তেমনভাবে গড়ে উঠতে পারে নি। এর ফলে দেখা যায় যে, তাদের শারিরীক গঠন অনেকটাই নাজুক হয়ে যায়। এছাড়াও তারা জানান যেসব ভালুক শাবক ছোটবেলা থেকে মায়ের দুধ খেয়ে বড় হচ্ছিল, তারাও মায়ের শাকাহারী হবার কারণে তাদের খাদ্যাভ্যাস তৃণভোজীদের মত হয়ে যায়, যেটি বেড়ে ওঠার জন্য একটি প্রতিকূলতা বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
‘বর্তমান যুগের পাণ্ডাদের মত এই মেরু ভালুকেরা তাদের খাদ্য নিয়ে ছিল অনেকটা নাজুক’, বলেন জার্মানীর প্রখ্যাত গবেষক হার্ভে বোহেরেন্স।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে অনেক নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে বহু বছর আগে বিলুপ্তিপ্রাপ্ত এই প্রাণীদের সম্পর্কে।
তথ্য সূত্রঃ ডেইলি মেইলের জার্নাল