যদি প্রশ্ন করা হয় আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কোন কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করছেন? তাহলে আমি আপনি বেশিরভাগ সবাই কিন্তু বলে উঠবো “ওয়ার্ডপ্রেস”। সত্যি কথা বলতে কি আমার মতে ওয়ার্ডপ্রেসের ফিচারগুলো এতোটাই ফ্রেন্ডলি যে, কোন কোডিং জ্ঞান ছাড়াই নিজস্ব ওয়েবসাইট রান করানো সম্ভব। মজার ব্যাপার হচ্ছে শুধু আমি আপনি না, ওয়েব ওয়ার্ল্ডের ১৯ ভাগ ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে রান করা।
মুলত ওয়ার্ডপ্রেসের প্লাগিন আর্কেটিকেচারটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় লাগে। কারন বিভিন্ন প্লাগিনের জন্য সাইটের অনেক কাজে ডেভলপারের সাহায্য নেওয়া লাগছে না। এর ফলে আমার সাইটের টুকটাক ডেভলপমেন্টের জন্য অতিরিক্ত খরচ বেচে যাচ্ছে।
তবে ওয়ার্ডপ্রেসের এতো ফ্লেক্সিব্লিটির কারনে আমরা কিন্তু অনেক সময় সাইটের ক্ষতি করে ফেলি। এটার জন্য আমি ওয়ার্ডপ্রেসকে দোষ দিবো না। বরং আমরা এর ফিচারগুলো ব্যবহারের সময় কিছু জিনিস মেনে চলি না যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সাইট হ্যাক থেকে শুরু করে খারাপ পারফর্মেন্সও হতে পারে। সুতরাং আর্থিক লস !
তাই আজকের আর্টিকেলে আমি সেই ৭টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আমরা আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস সাইট চালানোর সময় মেনে চলি না। তো পাঠক চলুন জেনে নেই কি সেই ৭ টি বিষয় যা আমাদের কখনই করা উচিত নয়-
১। লগ ইন ইউজাননেইম ‘Admin’ হিসেবে ব্যবহার করাঃ এটা ওয়ার্প্রেসে বাই ডিফল্ট থাকে। আর এটা যদি এখনো আপনি চেঞ্জ না করে থাকেন, তবে আজই চেঞ্জ করে ফেলুন। কারন হ্যাকার বাবাজি আপনার সাইটে লগ ইন করে ঢোকার জন্য সবার আগে ওটা দিয়ে ট্রাই করে। এখন আপনি যদি বাই ডিফল্টটাই রেখে দেন তাহলে তার অর্ধেক উপকার আপনি করে দিলেন 😛 আর হ্যাকার বাবাজি যদি দেখে যে আপনি ইউজার নেইম হিসেবে ‘Admin’ রেখে দিয়েছেন, তাহলে উনি আপনার সাইটের সিকিউরিটির দূর্বলতার ব্যাপারে ভাল একটা ধারনা দিয়ে দিলেন। বাহ! চরম একটা উপকার করছেন।
সুতরাং অ্যাডমিন হিসেবে লগ ইন এর জন্য ডিফারেন্ট ইউজার নেইম ব্যবহার করুন। হ্যাকার বাবাজির জন্য কাজটা একটু কঠিন করে দেন। এতো সহজে সব কিছু পাইলে হবে 😛
২। বেশি প্লাগিন ব্যবহার করাঃ OMG! এই প্লাগিন দিয়ে এইটা করা করা যায়, ঐ প্লাগিন দিয়ে ঐটা করা যায়। সবই তো আমার সাইটে লাগবে। এভাবে ভেবে যদি দুনিয়ার যত্তো প্লাগিন আছে ইনস্টল করা শুরু করেন, তাহলে সাইটের জন্য ইন্নালিল্লাহ বলাটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
যথেচ্ছ প্লাগিন ব্যবহারে অনেক অসুবিধা আছে। যেমন- বাগ সমস্যা, ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের নতুন ভার্সনের সাথে প্লাগিনের মনের মিল না হওয়া, সিকিউরিটি ইস্যু, ওয়েব সাইটের খারাপ পারফর্মেন্স।
সুতরাং একেবারে না লাগলেই নয় আপনার ওয়েবসাইটের জন্য, এরকম পরিমানের প্লাগিন ব্যবহার করুন। আর অবশ্যই ইনস্টলের আগে প্লাগিনের রিভিউ দেখে নিবেন।
৩। স্ট্যাগিং সার্ভার ব্যবহার না করাঃ স্ট্যাগিং সার্ভার হচ্ছে একধরনের টেস্ট সার্ভার যেটাকে মূলত আমরা লাইভ সার্ভারের রেপ্লিকা বলে থাকি। ধরুন কোন কাজের প্লাগিন ইনস্টল করতে চাচ্ছেন। এখন এটা স্ট্যাগিং সার্ভার দিয়ে দেখে নিলেন কেমন আউটপুট দেখাচ্ছে আগের থেকে। তবে রেপুটেড প্লাগিন হলে রেপ্লিকা নিয়ে মাথা না ঘামালেও হবে। আর টেস্ট সার্ভারের ব্যবহারটা শুধু প্লাগিনের ক্ষেত্রেই না, আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের থিম, লেআউট ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
টেস্ট সার্ভার ব্যবহার না করে সাইটে কোন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলে সাইটের অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যেটা পরবর্তিতে কভার করাটাও অনেকটা টাফ হয়ে যেতে পারে।
তাই এ ধরনের অনাকাঙ্খিত সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার ডেভলপারের কাছ থেকে লাইভ সার্ভারের ডুপ্লিকেট কপিটা বুঝে নিবেন।
৪. সাইটের সিকিউরিটি স্ট্রং না করাঃ যদি আপনার বিজনেস ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে রান করান তাহলে সাইটের সিকিউরিটির বাপারে আপনাকে অনেক সতর্ক হওয়া উচিত। জেনে অবাক হবেন হ্যাকার বাবাজিরা আল্লাহ এর ৩০ টা দিনই আপনার ওয়েবসাইট হাক করার ট্রাই করছে। সুতরাং আল্লাহ না করুক এমন যাতে না হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন আপনার ওয়েবসাইট অলরেডি অন্য কারো হয়ে গিয়েছে!
সুতরাং এমন কোন নামকরা ম্যানেজড হোস্টিং সার্ভিস অথবা প্লাগিন ইউজ করুন যাতে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের সিকিউরিটি স্ট্রং হয়। আমি আমার সাইটের সিকিউরিটির জন্য iThemes Security প্লাগিনটা ব্যবহার করি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ এর রহমতে কয়েকবার হ্যাকারের অপচেষ্টা থেকে সাইটটা বেঁচে গিয়েছে।
৫. মনে করছেন সাইটের ব্যাপআপ কাজ করছেঃ আপনার মনের মধ্যে এই অগাধ বিশ্বাসটা যাতে না হয় যে, আপনি যে কোম্পানির নিকট আপনার সাইটের ব্যাকআপের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা সব ব্যাকআপ রেখেছে। এমনো তো পারে তারা সব ফাইলের ব্যাকআপ নাও রাখতে পারে। তখন হবে কি কোন গুরুত্বপূর্ন ফাইল নষ্ট হয়ে গেলে সেটা আর রিকভার করাটা আপনার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং মাঝে মাঝে এই ব্যাপারটা ভালভাবে চেক করবেন।
৬. ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্সের ব্যাপারে সতর্ক না থাকাঃ ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিডটা অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর। এটা শুধু সাইটের গুগল র্যাংকিং এ প্রভাব ফেলে না, ভিজিটর ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আর বর্তমানে বেশিরভাগ ভিজিটর মোবাইল ডিভাইস দিয়ে সাইটে ভিজিট করে। এখন যদি আপনার সাইটের লোডিং স্পিড স্লো হয়, তবে ভিজিটর বেশি বাউন্স করবে। ফলে আপনি টার্গেটেড ভিজিটর হারাবেন। সুতরাং আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিডটা কেমন তা চেক করাটা জরুরী। এখন বলতে পারেন কিভাবে বুঝবো আমার সাইট স্লোতে লোড হচ্ছে! সাধারনত আপনার সাইটের হোম পেইজ লোড নিতে ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি লাগে তবে আপনাকে সাইটের লোডিং স্পিডটা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। চেষ্টা করুন ৫ সেকেন্ডের মধ্যে লোডিং স্পিডটা ধরে রাখতে। সাইটের স্পিড চেক করতে Web Page Test টুলটা ব্যবহার করতে পারেন।
আবার এমনো হতে পারে আপনার হোমপেইজ সুপার ফাস্ট কিন্তু পোস্টগুলোতে ইমেজ থাকার কারনে পোস্টের লোড নিতে সময় লাগছে। সেজন্য ক্যাশ প্লাগিন ব্যবহার করতে পারেন। যেমন W3 Total Cache এবং WP Super Cache হচ্ছে অন্যতম। তবে আমি আমার সাইটের জন্য W3 Total Cache প্লাগিনটা ব্যবহার করে থাকি। চাইলে আপনিও এটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
৭. সাইটের জন্য রেগুলার অডিট না করাঃ উপরের সব কিছু মেনে চলার পর হয়তো ভাবলেন আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইট ভালোভাবে এগোচ্ছে কিন্তু এর ভিন্নও হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন রেগুলার অথবা রেগুলার না পারলে কমপক্ষে প্রতি ৬ মাসে একবার সাইটের ওভারাল বিষয় অডিট করা। এতে আপনার নীচের কয়েকটা বিষয় চেকআপ হয়ে যাবে –
- সাইটের লোডিং স্পিড ঠিক আছে কিনা।
- স্ট্রং সিকিউরিটি মেইন্টেইন হচ্ছে কিনা।
- সাইটের ব্যাকআপ ঠিকমতো হছে কিনা।
- ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট আছে কিনা চেক করা অথবা এমন কিছু ইস্যু আছে কিনা চেক করা যেটা কন্টেন্ট অপ্টিমাইজেশনে সমস্যা হচ্ছে।
পরিশেষে একটাই কথা, যে ফ্যাক্টরগুলো আমি উপরে আলোচনা করেছি সেগুলো আপনি এখনো ফেস না করে থাকেন, তবে ভবিষ্যতে যে করবেন না তার কোন গ্যারান্টি নেই। সুতরাং এখন থেকেই উপরের বিষয়গুলো মাথায় এনে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটটিকে প্রটেক্ট করা শুরু করে দিন যাতে ভবিষ্যতের অনাকাঙ্খিত সমস্যাগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন।
আজ এখানেই শেষ করছি। আর্টিকেলটি কেমন হয়েছে কমেন্টে আপনার মতামত জানান অথবা আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। চাইলে সরাসরি ফেসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমার ফেসবুক প্রোফাইল- https://www.facebook.com/alauddin.almahdi15