জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে ওঠা, মাথা ব্যাথা, মানসিক অস্থিরতা এবং সবশেষে মৃত্যু- প্রতি বছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ এসব উপসর্গে ভুগে থাকে। রোগটির নাম ম্যালেরিয়া। দূর্ঘটনা ঠেকাবার জন্য যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে সর্বপ্রথমটি হচ্ছে মশার কামড় এড়িয়ে চলা।
কিন্তু শুধুমাত্র এতেই কি ম্যালেরিয়া এড়ানো সম্ভব? বছরের পর বছর ধরে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের সাথে যুদ্ধ করবার জন্য একটি ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি ২০০৯ সালে এটি নিয়ে একটি বইও বের করা হয়। গত সপ্তাহে নেচার নামক জার্নালে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যে বিজ্ঞানীরা এই ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছেন।

“আমরা বিজ্ঞানী হিসেবে জানি যে ১৯৭০ সালের পর থেকেই সাধারণত এই রোগটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা শুরু হয়ে গিয়েছে।” বলেছেন গবেষণার প্রধান স্টিফেন হফম্যান। হফম্যান একটি বায়োটেক কোম্পানীতে কাজ করছেন যেটি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করে। তবে এসব রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়াকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।
২০০৯ সালের পর থেকে বিজ্ঞানীরা এটা জানেন যে অ্যান্টি-ম্যাটেরিয়াল ড্রাগ ক্লোরোকুইনের সাহায্যে মশার কামড় দেয়াকে প্রশমিত করা যায়। কিন্তু আশঙ্কার কথা হচ্ছে এমন একটি রোগের ভ্যাকসিন যেটি কেবলমাত্র মশার কামড়েই সংক্রমিত হয়ে থাকে, তা নিয়ে গবেষণা করা কিছুটা মুশকিল।
হফম্যান বলেন, “আপনি নিশ্চয়ই মশা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন না কিংবা এটি যাতে আপনাকে কামড়াতে পারে, সে সুযোগও দেবেন না।” ম্যালেরিয়া একটি পরজীবির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়, এটি কোন ভাইরাসবাহী রোগ নয়।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজিস্ট পিটার বিল বলেন, “আমরা এমন সব প্রতিষেধকে অভ্যস্ত যেগুলোর অ্যান্টিজেন বেশ সহজেই তৈরি করা যায়।” কিন্তু ম্যালেরিয়ার কথা ধরতে গেলে তিনি বলেন যে বিষয়টি বেশ জটিল এবং এটি নিয়ে অনেক কিছু চাইলেই করা যাবে না। এটি নিয়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ম্যালেরিয়ার স্পোরোজয়েট দশা থেকেই ধীরে ধীরে এটি ছড়াতে থাকে। এই পরজীবির প্রায় ৫০০০ এরও বেশি জিন রয়েছে যে কারণে এটি নিয়ে কাজ করাটা খুবই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হফম্যান তার দল নিয়ে যে কাজটি করছেন তা হল, স্পোরোজয়েটের মাঝে এমন কিছু পরীক্ষা করছেন যার সাহায্যে কিভাবে এটি পরিস্কার করা যায়। এরপর তিনি এটি তা একজন রোগীর দেহে প্রবেশ করাবেন। ইঞ্জেকশনটি দেবার প্রক্রিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে। এর ফলে ম্যালেরিয়া রোগ থেকে আস্তে আস্তে সেরে উঠবেন উক্ত রোগী।
হফম্যান বলেন, “কাজটি বেশ সহজ নয় কিন্তু আমরা এটি নিয়ে ধীরে ধীরে কাজ করা শুরু করেছি। এখনই ভালো কোন ফলাফল পাব কিংবা ইতিবাচক কিছু বয়ে আসবে তা ভাবাটা দুষ্কর কিন্তু ম্যালেরিয়া রোগকে আমরা হারাবোই।”
সেটির অপেক্ষাতেই এখন বিশ্ববাসীরা!
সূত্রঃ পপুলার সায়েন্স