সুস্থ দেহ, সুস্থ মন, সকলেরই প্রয়োজন। কে না চায় সুস্থ থাকতে ? সুস্থ শরীর ও মন যার, জীবনে সুখের সন্ধান তো সে ই পায়। চিকিৎসাবিজ্ঞান আজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে , আজ আবিষ্ক্রৃত হয়েছে বহু রোগের ওষুধ। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু রোগের পরিপূর্ণ প্রতিষেধক আজও আবিষ্কৃত হয়নি। এসকল রোগের ক্ষেত্রে তাই প্রতিষেধক নয়, প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। ক্যান্সারও এমন একটি রোগের নাম। তবে প্রাথমিকবস্থায় সনাক্ত সম্ভব হলে এ থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব। ক্যান্সার বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। যেমন ত্বকের ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি। সবচেয়ে বেশি রোগী যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তা হল ত্বকের ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে। বন্ধুরা, এ পর্বে আজ আলোচনা করব প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা বিষয়ে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা মূলত নির্ভির করে এর অবস্থা, রোগীর বয়স, তার অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সমস্যার উপর। রোগীর বয়স যদি বেশি হয় তার আরো কোনো সমস্যা থেকে থাকে তবে চিকিৎসক কিছু টেস্ট নাও করতে পারেন। তবে রোগীর বয়স কম হলে অথবা রোগের অবস্থা গুরুতর হলে বড় ধরনের টেস্টগুলো করতে হতে পারে।
Radiation Therapy
এ ক্ষে একটি Beam radiation নির্গত করে ক্যান্সার কোষগুলো ধ্বংস করা হয়।
এ চিকিৎসা ব্যবহার করা প্রথম ট্রিটমেন্ট হিসেবে। প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণে হাড়ে ব্যথা হয়ে থাকলে এ চিকিৎসা হাড়ের ব্যথায়ও কাজ করে। তবে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্লান্তি, ডায়রিয়া, প্রস্রাবে সাময়িক সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
Surgery
যদি ক্যান্সার শুধু প্রোস্টেটেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে সার্জারীর মাধ্যমে প্রোস্টেটে ক্যান্সার আক্রান্ত অংশটুকু সরিয়ে ফেলা হয় এবং খেয়াল রাখা হয় অন্যান্য অংশ যেনো ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
তবে ক্যান্সার যদি অন্যান্য অংশেও যেমন লসিকা নোডে ছড়িয়ে পড়ে তবে সার্জারী না করাটাই ভালো। সার্জারীর ফলে প্রস্রাব এবং সেক্সুয়াল সিস্টেমে সাময়িক সমস্যা হলেও পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে তা ঠিক হয়ে যায়।
Hormone Therapy
এ থেরাপি মূলত প্রয়োগ করা হয় ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে রহিত বা হ্রাস করতে তবে পুরোপুরি দমন করা সম্ভব নয়।
তাই এটি তখনই কার্যকর হয় যখন এর সাথে অন্য কোনো থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রয়োগকৃত হরমোনের ফলে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন এবং এন্ড্রোজেন হরমোন উৎপাদন ব্যহত হয় ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয় পুরুষত্বহীনতা, স্তনটিস্যু বৃদ্ধি ইত্যাদি।
Chemotherapy
এ থেরাপ প্রয়োগ করে প্রোস্টেট এবং প্রোস্টেটের বাইরের ক্যান্সার কোষগুলোকেও ধ্বংস করা হয়। এর ফলে হরমোন থেরাপিতে যেসকল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রহিত হয় না তাও ধ্বংস হয়।
এটি খুব ইফেক্টিক একটি চিকিৎসা এবং রোগের এডভান্স লেভেলে এটি প্রয়োগ করা হয়। এ চিকিৎসা ৩ থে ৬ মাস ব্যাপী প্রদান করা হয় কারণ এর ফলে অন্যান্য দ্রুত বর্ধনশীল কোষও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চুল পড়া, বমি বমি ভাব ও বমি, ক্লান্তি ইত্যাদি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
Cryotherapy
এ থেরাপিতে ক্যান্সার কোষগুলি কে ফ্রিজিং করে নষ্ট করা হয়। এর ফলে ব্লাডার এবং অন্ত্রে সাময়িক জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা হয়।
Prostate Cancer Vaccine
এ ভ্যাক্সিন মূলত প্রতিরোধক নয় বরঞ্চ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো বেশি কার্যকর করা হয় যেন তা ক্যান্সার কোষ নিরাময়ে কাজ করে।
মাসে এ ভ্যাক্সিন তিন বার প্রয়োগ করা হয়। যখন হরমোন থেরাপি আর কাজ করে না এবং ক্যান্সার এডভান্স লেভেলে চলে যায় তখন এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়। জ্বর, বমি বমি ভাব এ ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
উপরোক্ত চিকিৎসা সমূহ একজন চিকিৎসক তার রোগীকে দিয়ে থাকেন রোগীর ক্যান্সারের অবস্থার উপর ভিত্তি করে। ক্যান্সারের অবস্থা নিরুপণ করা হয় বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে যা আগের পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।তাছাড়া রোগীর লাইফ স্টাইলের উপরও চিকিতসার ধরন নির্ভর করে। দেখা গেছে, একজন প্রোস্টেট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী নিয়মিত এক্সারসাইজের মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাসঃ
সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন।
* প্রতিদিন চার পাঁচটি ফল এবং সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* শস্য জাতীয় খাবার খান
* চর্বি যুক্ত খাবার কমিয়ে দিন
* প্রক্রিয়াজাত করা মাংস যেমন বার্গার, হটডগ ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
তাছাড়া পালংশাক, কমলার রস ইত্যাদি বিশেষ উপকারী। পাশাপাশি টমেটোতে বিশেষ ধরনের উপকারী এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে।
ওষুধ ও ভিটামিন সম্পর্কে সচেতন হোনঃ
কিছু কিছু ওষুধ ক্যান্সার রোধে সহায়ক বলে বাজারে বিক্রি করা। এ থেকে সতর্ক থাকুন। অনেকে ক্যান্সার প্রতিরোধে ভিটামিন ই সেবন করে। কিন্তু গবেষনায় দেখা গেছে, প্রোস্টেট ক্যান্সার রোধে ভিটামিন ই এর কোনো ভূমিকা নেই। আপনি যদি কোনো ভিটামিন সেবন করে থাকেন তবে সে বিষয়ে চিকিৎসককে অবহিত করুন।
স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
মিঠু ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জীবনে সুখের সন্ধানীদের জন্য অসধারন তথ্য তুলে ধরার জন্য। আশা করি সামনেও আপনি আরো তথ্য দেবেন।
thanks
আপনার প্রতিটি পোষ্ট অনেক গুরুত্বপুর্ন , অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য.