দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  ৫২৩ জন নারীর অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত দুইদিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল হ্যাকাথন ফর উইমেন-২০১৭’ শনিবার বিকেলে শেষ হয়েছে।

এর আগে, শুক্রবার  রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দুইদিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল হ্যাকাথন ফর উইমেন-২০১৭’।

প্রথমবারের মতো আয়োজিত দুইদিনব্যাপী এ জাতীয় হ্যাকাথনে অংশগ্রহনকারীরা দেশের আইসিটি খাতে স্বনামধন্য কোডিং ও সফটওয়্যার ডেভেলপারদের সহযোগিতায় আয়োজকদের নির্ধারিত ৯টি খাতে দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সফটওয়্যার আইডিয়া ডেভেলাপ করেছেন।

এই ৯ টি খাতের মধ্যে, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, কৃষি ও পরিবেশ, ব্যবসা ও বাণিজ্য, দক্ষতা অর্জন ও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন, গণমাধ্যম ও বিনোদন, নগরায়ন,  সুপরিকল্পিত বাসস্থান এবং অধীনতা ও ক্ষমতায়ন। এ প্রতিযোগিতা শেষে প্রত্যাকটি খাতে আলাদা আলাদা তিনটি করে মোট ২৭ টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে স্বাস্থ্য ও কল্যাণ খাতে প্রথম হয়েছে হয়েছে অপটিমিস্ট, কৃষি ও পরিবেশ খাতে গ্রীণ ওয়াল্ড, ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে সিইউ স্প্রীং, দক্ষতা অর্জন ও শিক্ষা খাতে জুুবিয়েল গার্ল, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে ট্রাসপেক্ট ০.২, গণমাধ্যম ও বিনোদনে ইনভিজিবল ফাইটারস, নগরায়ন ও সুপরিকল্পিত বাসস্থান খাতে ক্রিস্টোন এবং অধীনতা ও ক্ষমতায়ন খাতে মিস্ট কার্ডিনাল প্রথম স্থান অধিকার করছে। এছাড়া প্রত্যেক খাতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের পুরষ্কিত করা হয়েছে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বিজয়ীদেরর মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করেন। প্রত্যেক চ্যাম্পিয়ন কে ৫০ হাজার, প্রথম রানার আপ ৩০ হাজার এবং দ্বিতীয় রানারআপ ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে।

অনুষ্ঠানে পলক বলেন, হ্যাকাথনের প্রত্যেকটি প্রজেক্টকে ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে আইসিটি বিভাগ থেকে প্রয়োজনী সকল সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি মেয়েদের উদ্ভাবনী প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার আহবান জানান।

আইসিটি ডিভিশন ও ‘উইমেন ইন ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যৌথভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৫২৩ নারী অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে এ হ্যাকাথনের আয়োজন করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের আইসিটি খাতে নারীদের অবদান উল্লেখযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও দেশের সকল প্রান্তের নারীদের একই সাথে আইসিটির অঙ্গনে যুক্ত করার জন্য এখন পর্যন্ত কোন আয়োজন করা হয়ে ওঠেনি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৪৭০ নারী এই হ্যাকাথনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেন। ৩৬ ঘণ্টা ব্যাপী এই আয়োজনে নারীরা ৩৭টি গ্রুপে ভিন্ন ভিন্ন ৯ টি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকে বাস্তবায়নের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন।

শুক্রবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনায়েদ আহমেদ পলক। এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জনাব মুস্তফা জব্বার, সভাপতি, বেসিস, ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি, বেসিস, শামীম হাসান, সাবেক সভাপতি, বেসিস, মো. হারুনুর রশিদ, অতিরিক্ত সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং আবদুল খায়ের পাটোয়ারী, উপদেষ্টা, উইমেন ইন ডিজিটাল এবং আছিয়া খালেদা নীলা, প্রতিষ্ঠাতা উইমেন ইন ডিজিটাল সহ আরো অনেকে।

অনুষ্ঠানে জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে আইসিটি ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। বর্তমান সরকার এমন একটি এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে যার লক্ষ্য হলো ইনক্লোসিভ উন্নয়ন। আর আইসিটির উন্নয়ন সকল মানুষের জন্য। যে উন্নয়নে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত দুইদিনব্যাপী এ ‘ন্যাশনাল হ্যাকাথন ফর উইমেন-২০১৭’ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা পর্যায় থেকে আসা নারী ডেভেলপাররা এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, পলক আরো বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ১০০০ টি ইনোভেটিভ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম দুই বছরে কমপক্ষে ২০০টি সফটওয়্যার উন্নয়ন করা হবে যার জন্যে প্রথম চারমাসে ১ কোটি টাকা অনুদানের ড্রাফট শেষ হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালের মধ্যে উইমেন ইন আইসিটি ফর ইনিশিয়েটিভ চালু করা হবে যার আওতায় আগামী কয়েক বছরে আরো ১ লক্ষ নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষত করে তোলা হবে।

অনুষ্ঠানে জনাব মুস্তফা জব্বার বলেন, আমাদের মেয়েদের যে কোন কিছু অর্জন করে নেবার ক্ষমতা আছে। তারা খুব অল্পতেই কোনো বিষয় বুঝে নিতে পারে। এ জন্যে  বাংলাদেশের সবচেয়ে যে বড় পরিবর্তন এসেছে তা হলো শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ। তথ্য প্রযুক্তিতেও নারীরা তাদের সরব অংশগ্রহন নিশ্চিত করবে বলেই আমি মনে করি।

অনুষ্ঠানে আছিয়া খালেদা নীলা বলেন, বাঙালী নারীর সৃজনশীলতাকে প্রোগ্রামিং ও উদ্ভাবন দেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে।আগামী দিনগুলোতে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে যা আমাদের আইসিটি সেক্টরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here