চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মতো এবার রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ায় বাংলালিংকের সিম পুনঃনিবন্ধনে গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ জালিয়াতি করে একাধিক সিম পুনঃনিবন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরণের একটি জালিয়াতির খবর জানান বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী।
তিনি বলেন, “গ্রাহকের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে কোনো কোনো রিটেইলার বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি আশুলিয়ায় একজন রিটেইলার গ্রাহকের অমনোযোগিতার সুযোগ নিয়ে একজনের বিপরীতে একাধিক সিম রি-রেজিস্ট্রেশন করে নিয়েছে, গ্রাহক খেয়াল করেন নি। বলেছে, আবার ছাপ দিন, মেলেনি। অথচ প্রতিবারই আঙুলের ছাপ মিলেছে। প্রতিবারই রিটেইলার আলাদা আলাদা নম্বর রি-রেজিস্ট্রেশন করেছে, গ্রাহক খেয়াল করেন নি। এ ঘটনা আগেও ছিল, আগেও এমন অনেক সিম নিবন্ধিত হতো। কিন্তু আমরা ধরতে পারতাম না। এবার যেহেতু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে, গ্রাহকের কাছে এসএমএস যাচ্ছে, এভাবে তিনি জানতে পারছেন যে তার নামে এতোগুলো সিম নিবন্ধন হয়েছে। তখন আমরা তাকে ধরতে পেরেছি।”
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, “আশুলিয়ার খেজুরটেক বাজার এলাকায় ফারুক আহমেদ নামের এক যুবকের আকলিমা টেলিকম নামে একটি দোকান রয়েছে। সেখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে বাংলালিংক সিম পুনর্নিবন্ধন করেন সাধারণ মানুষ। এ সময় তাঁদের হাতে ছয় থেকে সাতবার করে আঙুলের ছাপ নেন ফারুক। এর মাধ্যমে ওই আঙুলের ছাপ নিয়ে ফারুক আহমেদ তাঁর দোকানের অন্তত পাঁচ শতাধিক সিম অন্যের নামে পুনর্নিবন্ধন করিয়ে কিছু ব্যক্তির কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন।”
এদিকে, সিম রেজিস্ট্রেশনের পর কিছু কিছু গ্রাহকের কাছে মোবাইলে বাংলালিংক অফিস থেকে খুদেবার্তা আসে, একই ছাপ দিয়ে পাঁচটি করে সিম রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। পরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বিষয়টি টের পেয়ে আশুলিয়া পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে ওই যুবক দোকানে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান। আবুল হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, তাঁর নামে প্রতারণামূলকভাবে ছয়টি সিম পুনর্নিবন্ধন করা হয়েছে। এসব সিম অপব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো মুহূর্তে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। পুলিশ ধারণা করছেন, এসব সিম অপরাধ কর্মকাণ্ড করার জন্যই অবৈধভাবে নিবন্ধন করা হয়েছে।
আশুলিয়ার মির্জানগরের খেজুরটেক এলাকার হাটুভাঙা জামে মসজিদের ইমাম জিল্লুর রহমান অভিযোগ করেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগে তার বাংলালিংক সিমটি স্থানীয় আকলিমা টেলিকম থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনঃনিবন্ধন করেন। এর কয়েকদিন পরই তিনি জানতে পারেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে আরও একাধিক সিম রি-ভেরিফিকেশন করা হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন খেজুরটেক এলাকার আজিজুর রহমান, আলাউদ্দিন কবির, আব্দুল জব্বার, শ্যামলী আক্তার ও কফিল উদ্দিনসহ কয়েক শত এলাকাবাসী। তারা অভিযোগ করে বলেন, আকলিমা টেলিকমের মালিক ফারুক হোসেন অবৈধভাবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে অন্যান্য বাংলালিংক গ্রাহকদের সিম পুনঃনিবন্ধন করেছেন। জালিয়াতি করে নিবন্ধন করা ওইসব গ্রাহক যেকোনও অপরাধ করলে এর দায় তাদের ওপর আসবে। ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও অভিযোগ করেন।
খেজুরটেক এলাকার কফিল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ দিয়ে আকলিমা টেলিকমের মালিক ফারুক হোসেন অবৈধভাবে বাংলালিংকের তিনটি নম্বর (০১৯২১-৩৪৪৫৮২, ০১৯২১-৩৪৪৬২০, ০১৯২১-৩৪৪৬১৮) পুনঃনিবন্ধন করিয়েছেন। কফিল উদ্দিন অভিযোগ করে আরও বলেন, আকলিমা টেলিকম অসৎ উদ্দেশ্যেই তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এসব সিম পুনঃনিবন্ধন করিয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ফারুক হোসেন তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালিয়ে গেলেও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হন।
এর প্রেক্ষিতে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী বলেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে সঠিকভাবে নিবন্ধিত করা গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কার্যকরীভাবে ধরতে পারবে, সেটা এখন হচ্ছে। আগামী ৩১ মে’র পর এ ঘটনা থাকবে না বলে জানান বারী। গ্রাহকের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যথেষ্ট গুরুত্বেও সঙ্গে বলতে চাই, কোনো সিস্টেম কার্যকর হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত গ্রাহক সচেতন না হবেন।
অনুষ্ঠানে সংস্থার চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খান, মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল আহমেদ, সচিব সরওয়ার আলম, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবিরসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।