আপনি কি ঘুমের ঘোরে নাক ডাকেন? এটা জানার জন্য আপনাকে অন্য কারোর সাথে ঘুমোতে হবে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে আপনার ব্যাপারে। সত্যি বলতে এটি একটি বিব্রতকর ব্যাপার। অনেকেই আপনার প্রতি বিরক্ত হবে। আপনি নিজে কিছু ঠিক না পেলেও আপনার নাক ডাকার কারনে অন্যদের ঘুম হবে না।

সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষেরাই বেশী নাক ডাকেন। আপনি কি মনে করেন, নাক ডাকার জন্য কি শুধুমাত্র আপনার নাকই দায়ী? সত্যি কিন্তু সেটা না। নাক ডাকার সময় এই বিরক্তিকর শব্দ তৈরি হয় নাকের তালু বা প্যালেটের নরম অংশের কম্পন থেকে। নাক কীভাবে এমন শব্দ তৈরি করে সেটি জানতে হলে আমাদের আগে শ্বাসপথ সম্পর্কে একটু ধারণা নিতে হবে।

নাক বা মুখ দিয়ে আমরা যে বাতাস গ্রহণ করি তা ফ্যারিংস বা গলবিল হয়ে ল্যাংরিস বা স্বরযন্ত্র হয়ে প্রবেশ করে ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিতে। সেখান থেকে ব্রনকাস বা ক্লোমনালি হয়ে ব্রনকিওল বা ক্লোমনালিকা হয়ে পৌঁছে অ্যালভিওলাস বা ফুসফুসের বায়ুথলিতে। নিঃশ্বাস ফেলার সময় বাতাস আবার এই পথেই ফেরে। আমাদের এই শ্বাসপথের সবচেয়ে কোমল অংশ হলো ফ্যাংরিস বা গলবিল, যার পুরোটাই তন্তু ও মাংসপেশি দিয়ে তৈরি।

স্বাভাবিক অবস্থায় ফ্যাংরিসের আকার বেশ গোলাকার এবং বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে থাকে। কিন্তু ঘুমানোর এর আয়তন ছোট হয়ে যায়। চিত হয়ে শুয়ে ঘুমালে জিভ ঝুলে পড়ে ফ্যাংরিসের দিকে। তালু, ফ্যাংরিস ও জিভের মাংসপেশি শিথিল হয়ে পড়ে। ফলে বাতাস চলাচলে বাধা পায় এবং ধাক্কা খায়। এই বাধা বা ধাক্কার ফলে নরম তালু বা সফট প্যালেটে কম্পন হয় এবং নাক ডাকে। মোটা মানুষ এবং বয়স্ক মানুষদের পেশি বেশি শিথিল থাকে বলে তাদের নাক ডাকে বেশি।

নাক নানা কারণে ডাকে। নাকের বিভিন্ন অসুখে, নাকের পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকলে, নাকে পলিপ বা কোনো টিউমার থাকলে, অ্যালার্জি বা নাক বন্ধ থাকলেও নাক ডাকে। গলার বিভিন্ন অসুখেও নাক ডাকে। যেমন – টনসিল, বড় জিভ, লম্বা আলজিভ, ছোট চোয়ালের হাড়, তালুতে প্যারালাইসিস, সিস্ট, পলিপ ইত্যাদি। এছাড়াও অতিরিক্ত মেদ, মদ্যপান, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, মাদকাসক্তি, থাইরয়েডের অসুখ, স্নায়ুঘটিত রোগ, হার্ট বা ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি কারণেও মানুষ নাক ডাকে।

snoring

চলুন এবার শুনি কিভাবে নাক ডাকা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়-

সত্যি বলতে আমি আপনাদের কে এমন কোন পদ্ধতির কথা বলতে পারবো না যেটি ফলো করলে আপনার এই সমস্যাটি একেবারে সমাধান হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ এতটুকু বলতে পারি যে, আপনি যদি নিয়মিত এই অভ্যাস গুলো গড়ে তুলতে পারেন তবে আপনার এই সমস্যাটি অনেকটাই কমে যাবে।

রাত্রে ঘুমনোর সময় যেকোনো এক পাশ ফিরে ঘুমোতে হবে-

সাধারণত আপনি যখন সোজা অর্থাৎ চিত হয়ে ঘুমোতে যাবেন তখন আপনার পাকস্থলিতে অনেক চাপ পড়বে। আর এটি নাক ডাকার অন্যতম একটি কারন। তাই চেষ্টা করুন রাত্রে ঘুমনোর সময় যেকোনো এক পাশ হয়ে সুতে।

শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর চেষ্টা করুন-

অনেক সময় শরীরে অতিরিক্ত ওজনের কারনে আপনার নাক ডাকার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রতিদিন সামান্য ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। বিশেষ করে ঘাড়ের কাছে গলায় অতিরিক্ত ফোলা থাকলে নাক ডাকার সমস্যা বেশী হয়। চেষ্টা করুন প্রতিদিন রুটিন মাফিক হাটা চলা বা জগিং করার।

আপনার কি নেশা করার অভ্যাস আছে নাকি?

নিয়মিত এলকোহল বা ঘুমের ওষুধ গ্রহনে আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ নার্ভ সিস্টেমের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি নিয়মিত গ্রহন করলে আপনার গলা ও চোয়ালের উপড় প্রেশার ফেলবে এবং পরবর্তীতে আপনার নাক ডাকার অন্যতম একটি কারন হবে এটি। এলকোহল বা ঘুমের ঔষধ যে শুধু মাত্র আপনার নাক ডাকার সমস্যা সৃষ্টি করবে তা ঠিক না। এটির আরও অনেক অনেক খারাপ সাইড ইফেক্ট আছে। তো যদি নিজের ভালো চান তবে এখনি এটি বাদ দিন।

আপনার শরীরে কি এলার্জির কোন কোন সমস্যা আছে কিনা-

আপনার যদি কোনো কিছুতে এলার্জি থাকে বিশেষ করে নাকে তাহলে দ্রুত তার চিকিৎসা করুন। কারন নাকের এলার্জির কারনে নাক বন্ধ থাকলে ঘুমের সময় নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। ফলে নাক ডাকা রোগ হতে পারে। তাই ঘুমানোর পূর্বে নাকে প্রয়জনীয় স্প্রে অথবা নেসাল ক্লীপ ব্যাবহার করুন।

ধূমপানের অভ্যাস থাকলে এখনি সেটি ত্যাগ করুন-

আমাদের অন্যতম কু-অভ্যাস হল ধূমপান করা। এটি শরীরের শ্বাসতন্ত্রের  অনেক ক্ষতি করে। ধূমপানের করার কারনে ফুসফুসের উপর অনেক চাপ পড়ে। ফলে আপনার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হবে এবং পরবর্তীতে নাক ডাকা শুরু হবে। তাই অতিরিক্ত ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

প্রতিদিন রাত্রে ঘুমনোর একটি রুটিন তৈরি করুন-

অনিয়মিত ঘুমের কারনে এই সমস্যাটি বেশী দেখা দেয়। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একই সময় ঘুমনোর। যেমন রাত ১১ টার মদ্ধে ঘুমিয়ে পরলেন আবার সকাল ৭টা বা ৮টার দিকে উঠে পরলেন এমন। আপনার প্রতিদিনকার ঘুম যদি নিরবিচ্ছিন হয় তবে দেখবেন আপনার শরীরটাও অনেক ভালো থাকবে আর এই সমস্যা থেকেও অনেকটা মুক্তি পেয়ে যাবেন।

আপনার মাথার নিচের বালিশটা যেন একটু উঁচু হয়-

আপনি যখন ঘুমোতে যাবেন তখন আপনার শরীরের ও মাথার উচ্চতা যদি একই হয় তবে এই সমস্যাটি বেশী দেখা যাবে। তাই চেষ্টা করেন একটু উঁচু বালিশ মাথার নিচে দিয়ে ঘুমনোর।

উপরের বিষয় গুলো যদি ঠিক মতো মেনে চলেন তবে আশা করছি আপনার সমস্যাটি আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে। আর যদি খুব বেশী সমস্যা দেখা দেয় তবে আমি বলবো আর দেরি না করে আজই ডাক্তার দেখান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here