বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে একমাত্র দল হিসেবে টিম পেডিকেয়ার প্রতিযোগিতা করছে এইচইসি মন্ট্রিয়্যাল,কানাডা এবং দি গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব, জার্মানি আয়োজিত সোশ্যাল বিজনেস ক্রিয়েশন কম্পিটিশনে। এই টিমের সদস্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চারজন শিক্ষার্থী কাজী মিশু, ফয়সাল বিন আবুল কাসেম, ভাস্কর সরকার এবং শামসুন নাহার লিপি।
সোশ্যাল বিজনেস (সামাজিক ব্যবসা) হচ্ছে এমন এক ধরনের বিজনেস মডেল যা সমাজের কোন সমস্যাকে দূর করার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সাধ্যের নাগালে সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে এবং যা কখনও কোন চ্যারিটি বা ডোনেশনের ওপর নির্ভর করে না। এই ব্যবসায় অর্জিত মুনাফা সবসময়ই আবার ব্যবসায় ফিরে আসে কাজেই লগ্নির বিপরীতে উদ্যোক্তা কোনো সুদ বা মুনাফা নিতে পারেন না।এইচইসি মন্ট্রিয়্যাল ইউনিভার্সিটি এমনই ব্যাবসায় ছাত্র ছাত্রীদের উদ্ধুদ্ধ করার জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
ড্যাফোডিলের এ দল বর্তমানে কাজ করছে ৩ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের সাপ্লিমেন্টারি ফুড বা সহায়ক খাবার নিয়ে, যার নাম পেডিকেয়ার। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বাজারে প্রচলিত যে সকল বিদেশী শিশুখাদ্য রয়েছে সেগুলো থেকে পেডিকেয়ারের মূল্য হবে প্রায় অর্ধেক, কিন্তু খাদ্যমান থাকবে অটুট। পেডিকেয়ারের লক্ষ্য তিনটি- শিশুদের সঠিক সময়ে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা, বাজারে সুলভ মূল্যের দেশীয় শিশুখাদ্যের অভাব পূরণ করা এবং সামাজিক ব্যবসার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজের বৈষম্য নির্মূল করা। যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আমাদের দেশের সোনামনিদের স্বাস্থ্য, তদুপরি মেধার বিকাশ।
জনবহুল এই দেশে শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি সেখানে আমাদের দেশে স্কুলপড়ুয়া শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি! প্রচন্ড এক অমিত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে এইসব শিশুদের মাঝে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, তুলনামূলক সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুরা সঠিক সময়ে স্কুলজীবন শুরু করতে পারে না। শিশুদের মাঝে দেখা যায় পড়ালেখায় অমনোযোগিতা, শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া,স্বাভাবিক আচরনে পরিবর্তন। বিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রাক্কালেই যদি তারা অপুষ্টিতে ভোগে তবে তার ফলাফল হয় জীবনব্যাপী ।কিছু সামর্থ্যবান এবং সচেতন অভিভাবক তাদের শিশুদের আলাদা ফুড সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন যাতে তাদের শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবারে দেখা যায় অসচেতনতার কারনে প্রাপ্তবয়স্কদের খাবারে শিশুদের অভ্যস্ত করানো হয়। সে খাবারে না থাকে তাদের বৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পুষ্টি, না সে খাবার তাদের পরিপাকতন্ত্রের উপযোগী। সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।
এইসব প্রতিকূলতা দূর করার নিমিত্তে শিশুখাদ্যকে সকল অভিভাবকদের সাধ্যের মধ্যে আনার জন্য এই প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মকে কাজে লাগাতে চায় পেডিকেয়ার প্রজেক্টে কাজ করা শিক্ষার্থীরা। তারা ইতিমধ্যে নিজেরা বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে শিশুদের পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা গণসচেতনতা তৈরি করছে। গণসচেতনতা তৈরিতে পেডিকেয়ারের নিজস্ব ওয়েবসাইটও ভূমিকা রাখছে। তাদের উদ্যোগ সম্পর্কিত একটি সাইন পিটিশন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রচারণার পাশাপাশি ডি.আই.ইউ এর ব্যবসা প্রশাসন এবং পুস্টি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের সহযোগিতায় বিজনেস ডেভলপমেন্টের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল সুহিলপুরে মাঠ সমীক্ষণ করেছেন। সেদিন নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল হাড়িয়া সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন, সুবিধা-বঞ্চিত বাচ্চাদের পুষ্টিমান সমীক্ষণ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি সচেতনতা পাঠদান, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা এবং গ্রামীণ মায়েদের উঠান বৈঠক।
বাংলাদেশ থেকে একমাত্র টিম হিসেবে এই শিক্ষার্থীরা প্রথম ধাপ পার করেছে। এই কার্যকরী সমাধানকে আলোর মুখ দেখাতে এবং এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নামকে উজ্জ্বল করতে তাদের পরবর্তী ধাপ পার করতে হবে যার জন্য তাদের প্রয়োজন সবার সহযোগিতা।
তাদের ফেসবুক পেজঃ fb.com/pedicarebangladesh এবং
পিটিশনের লিঙ্কঃ https://goo.gl/AeqbCC
ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে এবং পিটিশনে সাইন করে আপনিও এই উদ্যোগের অংশ হয়ে তাদের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারেন।
বেড়ে উঠুক সকল সোনামণি পরম মমতায় ও সঠিক পুষ্টিতে!