আমরা অনেক সময় রাস্তা ঘাটে কিছু মানুষকে দেখি যারা বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখায়। গতকালকেও ঠিক এমনি এক ভণ্ড প্রতারককে দেখলাম কিসব জাদুমন্তর কারসাজি দেখাতে। আপনাদের কি মনে হয় এগুলো কি সত্যি? না এগুলো কিছুই সত্যি না সব চোখের ধাদা। বলাচলে সম্মোহনের একটি পার্ট।
এরা কখন আপনার চোখের আড়ালে পকেটের সব টাকা বের করে নিয়ে যাবে ঠিকও পাবেন না। চলুন সম্মোহন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
হিপনোসিস শব্দের অর্থ সম্মোহন। একজনের চরম প্রস্তাবনা, তীব্র আবেগ ও কল্পনা শক্তি দ্বারা অন্যের মনকে প্রভাবিত করা এবং পরিচালনা করাকে বলা হয় হিপনোসিস।
প্রাচীন কাল থেকেই সম্মোহন বিদ্যা প্রচলিত রয়েছে মানব সমাজে। সে কালে এই বিদ্যাকে যাদুবিদ্যা বা অলৌকিক ক্ষমতা বলে মানুষ বিশ্বাস করত। অষ্টাদশ শতকে সম্মোহন বিদ্যার নামকরণ হয় ‘মেজমেরিজম’ অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের ডাক্তার ফ্রাণ্ডস্ অ্যান্টন মেজমার সম্মোহন বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। ফলে এর ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং ডাক্তারবাবুর নামানুসারে সবাই একে ‘মেজমেরিজম’ বলতে থাকে। ১৮৪০ সালে স্কটল্যাণ্ডের এক ডাক্তার জেমস ব্রেড নতুন নামকরণ করেন। গ্রিক শব্দে ঘুমের দেবতার নাম ‘হুপ্নস’ এই শব্দের অর্থ হল ঘুম। সম্মোহিত ব্যক্তি যে হেতু এক প্রকার ঘুমের ঘোরে কাজ করে যায় তাই ডাক্তার ব্রেড এই বিদ্যার নাম দিলেন ‘হিপনোটিজম’ এ নামই বর্তমানে প্রচলিত।
কি ভাবে সম্মোহন করা হয় তা জানা গেলেও আসলে কি ঘটে এ পূর্নাঙ্গ ব্যাখ্যা বিজ্ঞান এখনও দিতে পারেনি। কারণ মানুষের মন কিভাবে কাজ করে এটা আসলে অনেক বড় বিভ্রান্তির মধ্যে এক টুকরা ছোট বিভ্রান্তি।
এটি এক ধরণের চরম প্রস্তাবনা, শিথিলতা এবং তীব্রতার কল্পনা শক্তির দ্বারা একটি অস্বাভাবিক স্বপ্নায়ন মোহগ্রস্তের অবস্থার বৈশিষ্ট্য বর্ননা করে। যা অনেকটা ঘুমের মত মনে হলে আসলে ঘুম নয়। কারন বিষয়টি পুরো সময়জুড়ে সজাগ থাকে। অধিকাংশ সময় একে দিবা স্বপ্নের মত মনে হয়। অথবা কোন বই বা মুভিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মত।
হিপনোসিস চলাকালীন সময়ে মস্তিষ্কের সচেতন অংশকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ঐ ব্যক্তির বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলোকে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং তাকে রিলাক্স করার দিকে মনোনিবেশ করা হয়। যখন আমাদের মন কোন একটি দিকে নিবিষ্ট হয়, কেন্দ্রীভূত হয় তখনই আমরা শক্তি অনুভব করি। যখন কোন ব্যক্তি সম্মোহিত হয় তখন আমরা তার মাঝে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ও লক্ষ্যনীয় হয়। যেমন তার নাড়ীর স্পন্দন ও কমে যায়, শ্বাস প্রশ্বাস ও কমে যায়। সেই সাথে তার মস্তিষ্কের আলফা স্তরে ঢেউ খেলতে থাকে। এই সময়ে ঐ ব্যক্তিকে কোন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বা বিশেষ কোন নির্দেশনা প্রদান করা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই বিদ্যাকে ব্যবহার করতেন ইংল্যাণ্ডের ডাক্তার এস ডেল। তিনি সম্মোহনের সাহায্যে রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে দাঁত তুলতেন, ছোটখাট অপারেশনও করতেন।
আর বর্তমানে আমরা এগুলো ব্যবহার করছি মানুষের ক্ষতি করার জন্য। অবশ্য সবাই এমনটি করে না। এখন এমন মানুষ আছেন যারা মানুষের কল্যাণে সম্মোহন বিদ্যার প্রয়োগ করে আসছে।
আপনি কি এমন কোন প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলেন কখনো? যারা মানুষকে অবচেতন করে তার সর্বস্ব হাতিতে নেয়। কমেন্টে যানাতে পারেন আপনার মতামত।