স্কুলে যখন আমরা পড়াশোনা করতাম, তখন নতুন ক্লাসে ওঠার পর যে বই দেয়া হত তার পাতা উল্টিয়ে এক অদ্ভুত গন্ধ পাওয়া যেত। বুক ভরে শ্বাস নেয়া হত সে সদ্য পাওয়া নতুন বইয়ের। আসলে বইয়ের গন্ধ কেমন হয়? নতুন বইয়ের গন্ধে কাগজ ও কালির এক ধরণের গন্ধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুরনো বইয়ের গন্ধই অন্যরকম। পুরনো বইয়ের পাতা উল্টালেই এক ধরণের গন্ধ পাওয়া যায়। একটি মিষ্টি, অন্যরকম গন্ধ। এই গন্ধেই মাতাল হয়ে যান বইপ্রেমীরা।
অবশ্য আরো একটি জিনিসও রয়েছে। পুরনো বইয়ের গন্ধে পাওয়া যায় চকোলেটের গন্ধ। ভাবছেন বানিয়ে বলছি? মোটেও না। এটি পরীক্ষিত সত্য।

ছবি সূত্রঃ লাইভ সাইন্স
ইউভার্সিটি কলেজ লন্ডন’স ইন্সটিটিউট ফর সাসটেইনেবল হেরিটেজ কর্তৃপক্ষ একটি গবেষণা করার চেষ্টা করেছেন পুরনো বইয়ের গন্ধ কেমন হয় তার ওপর। তারা সময় ও বইয়ের পাল্লার ওপর ভিত্তি করে পুরনো বইয়ের গন্ধ কেমন হয় তার একটি পরীক্ষা করেছেন। এমন সব বই বেছে নেয়া হয়েছে যেগুলো অতি পুরনো কিন্তু বয়সের ভারে কোন ধরণের ক্ষতি হয় নি।
পরীক্ষাটি শুরু হয় রসায়নবিদ মারতিয়া স্ত্রালিকের একটি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। পরীক্ষা করতে করতে তিনি হঠাৎ করে খেয়াল করেন যে পেপার কনজারভেটররা বইয়ের গন্ধ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন কাজ করতে করতে। কারণ জিজ্ঞাসা করতে কনজারভেটররা জানান, গন্ধ শুঁকেই তারা বলে দিতে পারেন কোন বই কি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নিজেও একজন কনজারভেটর হবার কারণে স্ত্রালিক এর ওপর একটি পরীক্ষা শুরু করে দেন। তিনি বইয়ের গন্ধের মাপকাঠি কেমন হতে পারে এবং তাদের বিশেষায়িত কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। স্ত্রালিক বলেন,
“আমরা এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টায় রয়েছি যেটি মানুষের নাকের ঘ্রাণশক্তির চাইতেও অধিক প্রখর ও কার্যকরী হবে।” বইয়ের পাতা যখন খোলা হয়, তখন এটির মাঝ হতে বেশ কিছু গন্ধ অনুভব করা যায়। এই উপাদানগুলোকে বলা হয় ভলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস (ভিওসি)। আমাদের নাক এই গন্ধগুলোকে রাসায়নিক সিগ্নেচার হিসেবে গ্রহণ করে এবং আমাদের মস্তিষ্ক একে বিভিন্ন রকম গন্ধে রুপদান করে।

ছবি সূত্রঃ লাইভ সাইন্স
এই উপাদানগুলো বিভিন্ন ধরণের সেন্সর দ্বারা বোঝা যায়, ঠিক যেমনটি কোন ধরণের বোমা বা ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের মাঝে পাওয়া যায়। কিন্তু স্ত্রালিক বলছেন এই গবেষণা করবার সময় তিনি ছোট ছোট কিছু রাসায়নিক দ্রব্যের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। মজার ব্যপার হচ্ছে, এই রাসায়নিক দ্রব্যের গন্ধ একেবারে চকলেট কিংবা কফির মত। বইয়ের গন্ধ কিভাবে একজন মানুষকে আবেগপ্রবণ কিংবা স্পর্শকাতর করে তুলতে পারে, সেটি নিয়েও গবেষণা করছেন তারা।
স্ত্রালিক বলছেন,
“এটি খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার যে মধ্যযুগীয় যেসকল বইয়ের গন্ধ নিয়ে আমরা গবেষণা করছি, এগুলোতে বার বার আমাদের সেন্সর কফি ও চকলেটের রেফারেন্স নিয়ে আসছে।”
দেখাই যাক, বিজ্ঞানীরা এবার বইয়ের সাথে গন্ধের কি ধরণের নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আসেন!
সূত্রঃ লাইভ সাইন্স