বিশ্ব আসলেই ব্যাপক বড়, এটি নিয়ে বেশী চিন্তায় মগ্ন হয়ে বুঝতে গেলে তা আমাদের মস্তিষ্কে বেদনার অনুভূতিই জাগাবে। কিছু চিন্তার বা বিস্তৃত ব্যাপার আছে পৃথিবী সম্পর্কে যা আমাদের অজানা অথবা জানা।
১. বিশ্বের কোন পার্শ্বরেখা নেই
যদিও একটি পার্শ্বরেখা আছে আমাদের জানামতে তা হলো, চক্রবাল বা দিগন্ত এবং তার সীমাবদ্ধতা আমাদের যতদূর চোখ যায় ততটুকের মাঝেই।
যদি কল্পনা করা হয় যে, নৌকায় পালতোলা হচ্ছে এবং দূরত্বে দেখা যাবে দিগন্ত, দেখে মনে হচ্ছে, যা আমরা জানি, পৃথিবীর আরো বিস্তৃত কিন্তু তা সম্পূর্ণরূপে দেখতে পাচ্ছিনা। আমরা পৃথিবীকে সমতলভাবে পরিমাপ করেছি, কিন্তু চক্রবাল বিদ্যমান আলোর সসীম গতির জন্য।
দৃশ্যমান চক্রবাল ছাড়াও, আমরা মনে করে থাকি যে বিশ্ব সবসময় একদিকেই চলে চিরকাল।
আমাদের আসলে কোন কারণই নেই এটি বিশ্বাস করার যে পৃথিবীর কোন পার্শ্বরেখা রয়েছে। কিন্তু আমাদের এই অসীমতা পরিমাপ করার ও কোন উপায় নেই কারণ আমরা তা শারীরিকভাবে দেখতে পাচ্ছেনা।
২. বিশ্বের ৯৫ শতাংশ তৈরি অন্ধকার বস্তু এবং অন্ধকার শক্তি দিয়ে
শুধুমাত্র ৫ শতাংশ সাধারণ বস্তু এই পৃথিবীতে তৈরি যেমন গ্রহ, গাড়ি এবং কফি। এই সাধারণ বস্তুগুলো তৈরি আসলে ইলেকট্রন, নিউট্রন, প্রোটন দিয়ে।
অন্য বহিরাগত ২৪ শতাংশ বস্তু তৈরি মধ্যাকর্ষনের মিথস্ক্রিয়ার ফলে, কিন্তু কোন আলো উৎপন্ন করেনা, অদৃশ্য থাকে আমাদের কাছে। এগুলোকে আমরা বলি অন্ধকার বস্তু বা ডার্ক ম্যাটার।
অন্ধকার শক্তি হচ্ছে মহাকর্ষীয় এক নিকশী প্রভাব যা পৃথিবীর গতি বৃদ্ধির উপর বিস্তৃত প্রভাব ফেলে। তবে আমরা এ গতি বৃদ্ধির ত্বরণ সম্পর্কে অজ্ঞাত।
৩. পৃথিবীর কোন কেন্দ্রস্থল নেই
বিশ্ব বিস্তৃত হচ্ছে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগ থেকে, বিগ ব্যাং তত্ত্বের পর থেকে। মহাকাশে বিগ ব্যাং কখনই কল্পনা করা উচিৎ না সাধারণ বিস্ফোরণ হিসেবে। বরং মহাকাশে বিগ ব্যাং নিজেই একটি বিস্ফোরণ, এজন্য মহাকাশে একটি কেন্দ্র থেকে আরেকটি কেন্দ্র সমানভাবে বিস্তৃত। এই সম্প্রসারণের কোন কেন্দ্র নেই।
৪. বহুদূরের ছায়াপথ অতীতের আভাস পদার্পণ করে থাকে
আমরা যখন দূরবর্তী ছায়াপথে নজর দেই, তখন আমরা আসলে অতীতের ধারণকৃত ছবির দিকে নজর দেই।
কিছু কিছু ছায়াপথ এতই দূরে অবস্থান করে যে তার থেকে নিঃসৃত আলো আমাদের কাছে পৌছাতে লাগে বিলিয়ন বছর প্রায়, এমনকি আলোর গতিতেও। যে ছবি আমরা দূরবীন থেকে সংগ্রহ করতে পেরেছি তা আমাদের ধারণা দেয় ছায়াপথ কেমন ছিলো প্রায় বিলিয়ন বছর আগে যখন আলো নিঃসৃত করেছিলো।
৫. ভবিষ্যৎ কৃষ্ণগহ্বরের অধীনে চলে যাবে
আমরা এখন স্টেলিফেরাস যুগে বসবাস করছি যার মানে পৃথিবী তারকা বা নক্ষত্রে পরিপূর্ণ। এই যুগ এর সূচনা হয় কয়েক শতক বছর আগে বিগ ব্যাং এর পর যখন প্রথম তারকাটি গঠিত হয়।
এখন, প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পর, নতুন তারকাদ্বয় গঠিত হতে শুরু করেছে। অবশেষে নতুন তারকাদ্বয় গঠন হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং সকল তারকা বা নক্ষত্র পুড়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু দূরবর্তী ভবিষ্যতে কৃষ্ণগহ্বর ব্যাপক সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠবে।
এটি বিশ্বাস করা হয় যে প্রত্যেকটি ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি ব্যাপক কৃষ্ণগহ্বর অবস্থান করে। তার মানে অবশেষে শত শত কোটি বছর পর কৃষ্ণগহ্বর গোটা বিশ্ব জুড়ে সম্প্রসারণ লাভ করবে। অনেক শত শত শত কোটি বছর পর এই কৃষ্ণগহ্বর গুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে হকিং বিকিরণ দ্বারা। বাদবাকি প্রাথমিক কণা গুলো সুবিশাল মহাকাশ দিয়ে ভেদ করে শূন্যে স্থান নিবে। বিশ্ব বাসিন্দাশূন্য হয়ে উঠবে।
লেখকঃ নাজিয়া আক্তার, শিক্ষার্থী, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।