স্টিফেন হকিং, অমর্ত্য সেন, মার্টিন রিজ, আব্দুস সালাম, লুইস জনসন- প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ ছিলেন তার বন্ধু। স্টিফেন হকিং ছিলেন তার রুমমেট। আব্দুস সালাম তার সম্পর্কে বলেছিলেন,
“আমার পরে এই উপমহাদেশে যদি কেউ নোবেল পুরস্কার পাবার দাবিদার হয়, তাহলে সে হচ্ছে …”
ধারণা করুন তো, শূন্যস্থানে কার নাম বসতে পারে? আসুন আজ আমরা এই মানুষটি সম্পর্কে কিছু জেনে নেই। বাংলাদেশের এই কৃতি সন্তান অনেকটাই বিস্মৃত। কিন্তু তার কাজের কথা শুনলে আমরা হব শিহরিত এবং আনন্দে উদ্বেল। তার নাম জামাল নজরুল ইসলাম।
শুরুর কথাঃ
জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান বাঙালি বিজ্ঞানী। তার বাবা খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলাম ছিলেন একজন সহকারী জজ। বাবার চাকরির সুবাদেই জামাল নজরুলের পড়াশোনাটা হয় ভারতে।

ছবি সূত্রঃ গুগল
পড়াশোনাঃ
জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন নবম শ্রেণী পর্যন্ত এবং এরপর তিনি লরেন্স কলেজে যান। ১৯৫৯ সালে তিনি ফাংশনাল ম্যাথমেটিকস ও থিওরেটিকাল ফিজিক্সে অনার্স সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কি ছিল জানেন? কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়!
১৯৬০ সালে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কেম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ হতে তিনি ফলিত গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একাধারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়- উভয় বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করেছেন।
যেসব ক্ষেত্রে তিনি কাজ করেছেনঃ
জামাল নজরুল ইসলাম বিজ্ঞানের এমন সব ক্ষেত্রে কাজ করেছেন যা শুনলে আমাদের চোখ চড়কগাছ হয়ে ওঠে। থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স, এপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স, ম্যাথমেটিকাল ফিজিক্স, কসমোলজি, জেনারেল রিলেটিভিটি, কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরী ইত্যাদি বিজ্ঞানের নানান ক্ষেত্র ও দিকে তিনি কাজ করেছেন। আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটি নিয়ে তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে গবেষণা করেছেন।
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ইংল্যান্ডের শহর স্যাফ্রন ওয়াল্ডেনের বার্টন বাটলারের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে বলেন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। এভাবেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন।
অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে যেদিন নোবেল পুরস্কার পান, তার আগের রাতে অধ্যাপক জামাল নজরুল তার সাথে আড্ডা দিয়েছিলেন। পরদিন অমর্ত্যকে বলেছিলেন, “তুমি তো আমাকে কিছু জানালে না হে!” অমর্ত্য সেন হেসে বলেছিলেন, “ধুর ছাই! আমিও কি কিছু জানতাম নাকি?”
স্টিফেন হকিং তাকে অনেক অনুরোধ করেন কেম্ব্রিজে যোগদান করার জন্য কিন্তু জামাল নজরুল ইসলাম দেশের টানে, মাতৃভাষার টানে তৎকালীন আমলের সোয়া লাখ টাকা বেতনের পরোয়া না করে দেশে ফিরে মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে যোগ দেন। এখানে তিনি গড়ে তোলেন বিশ্বমানের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডভাইজরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার লেখা কিছু বইঃ
১৯৮৩ সালে তার লেখা বই দ্য আল্টিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স বিজ্ঞানী মহলে বেশ সাড়া ফেলে। এছাড়াও ক্লাসিকাল জেনারেল রিলেটিভিটি, রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, স্কাই এন্ড টেলিস্কোপ ইত্যাদি তার লেখা বই ও সম্পাদিত গ্রন্থ।
আজ আমরা কোন মডেল, খেলোয়ার, নায়ক, নায়িকার জন্মদিন এলে আনন্দে উদ্বেল হই, খুশির জোয়ারে ভাসি। কিন্তু দেশের এই কৃতি সন্তানদের আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারি না। ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ এই মহান বিজ্ঞানীর অকালপ্রয়াণ ঘটে।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট