ভার্চুয়াল জগতে এক ধরণের যুদ্ধই নিয়ে এসেছেন মার্ক জাকারবার্গ। এই যুদ্ধ হচ্ছে নকল খবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, যা প্রতিনিয়ত মানুষকে প্রতারিত করছে।ফেসবুকে ভুয়া খবরের ওপর নির্ভর করে মানুষ বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে তাদের আস্থা হারাচ্ছে এবং খবরের সত্যতা যাচাই না করেই এক ধরণের “হোক্স” (মিথ্যা ঘটনার ওপর ভিত্তি করে গুজব রটানো) ছড়াচ্ছে। মার্ক জাকারবার্গ এই ভুয়া খবর যারা ছড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে এক ধরণের ভার্চুয়াল যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।তিনি বলেছেন এখন থেকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্রমাগতই রিপোর্ট করে যাচ্ছেন যে যখন তারা কোন ধরণের আর্টিকেল পড়তে যান,তখন স্ক্রীনে একটি পপ-আপ উইন্ডো ভেসে ওঠে এবং এটি থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকার দ্বারা পরিচালিত হয়।
মিডিয়া কর্মী জন অরান্ড তার একটি টুইটে বলেছেন, “ফেসবুকে ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে একটি পপ-আপ উইন্ডোর মাধ্যমে এবং এটি নানা ধরণের ভ্রান্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে মানুষকে।”
এই পপ-আপে বলা হচ্ছে, “এই পপ আপে যে কাজটি করা হচ্ছে তা চেক করছে স্বাধীনভাবে কাজ করে এমন ফ্যাক্ট চেকাররা।এই ফ্যাক্ট চেকাররা আপনার সম্পর্কে সকল তথ্য নিয়ে নেবে এবং তা পরবর্তীতে আপনার নানা ধরণের ক্ষতি সাধন করতে পারে।”
এবার আসা যাক ফ্যাক্ট চেকিং প্রোগ্রাম কয়টি উপায়ে হতে পারে। অর্থাৎ, ফেসবুকে ভুয়া খবর কয় ধরণের হতে পারে তা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলঃ
১) ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলপথে চালিত করাঃ
মাঝে মাঝে এমন কিছু খবর পোস্ট করা হয়, যা আদতে ঘটেই নি। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরদ্ধে অবস্থান করার জন্য কোন একজন সেলিব্রিটির নাম দিয়ে বলা হয়েছে যে, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন।আসলে এমন কিছু ঘটেই নি। এটিকে “ডিফেমাইজেশন”এর তালিকাভুক্ত করা যায়। অর্থাৎ, কারো ইমেজ ক্ষতিগ্রস্থ করে এমন কোন কিছু ফেসবুকে পোস্ট করা।
২) মজার ছলে মিথ্যা খবর ছড়ানোঃ
অনিয়ন কিংবা ডেইলি ম্যাশের মত যেসব স্যাটায়ার সাইট রয়েছে তারা কৌতুকের ছলে মাঝে মাঝে মিথ্যা খবর পরিবেশন করে থাকে।অবস্থা সীমার বাইরে অতিক্রম করে যখন পাঠকরা এটিকে সত্য হিসেবে ধরে নেয় এবং শেয়ার করতে থাকে।
৩) বৃহৎ আকারের গুজবঃ
পরিচিত কিংবা নির্ভরযোগ্য মিডিয়া যখন যাচাই বাছাই না করেই কোন খবর পোস্ট করে,তখন মানুষ প্রতারিত কিংবা বিভ্রান্তিতে পরে যায়। যেমন ধরা যাক করোনা বিয়ারের ফাউন্ডারের কথাই।একটি প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে যে তিনি গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন ব্যক্তি যিনি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় ও শ্রমের বলে এ পর্যন্ত এসেছেন। কিন্তু মূল ঘটনা আসলে তা নয়।
৪) কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেঃ
মাঝে মাঝে এমন কিছু খবর প্রকাশ করা হয়ে থাকে, যা সত্য ঘটনা ও তথ্যের ওপর আধার করা কিন্তু কোন ব্যক্তিগত এজেন্ডা বা স্বার্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট
এমন সব নিউজ পোর্টাল রয়েছে যেখানে প্রচারিত খবরে সত্যের লেশমাত্র থাকে না। এই ধরণের খবরগুলো বৃহৎ আকারে কোন দাঙ্গা কিংবা কমিউনিটি ভাইব তৈরি করে যেখানে এক পক্ষের মানুষ কোন যাচাই বাছাই না করেই আরেক পক্ষের মানুষের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে কিংবা সালেমে কালোদের ওপর সাদারা এই ধরণের খবরে প্ররোচিত হয়ে নানান ধরণের ফ্যাসাদ কিংবা কমিউনিটি ক্ল্যাশে লিপ্ত হয়।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে তারা এই ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে এবং তাদের ফেসবুক টিম কঠোরভাবে মনিটরিং এর মাধ্যমে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান করবে যাতে আর কোন ভুয়া খবরে মানুষ প্রতারিত না হয়।
তথ্য সূত্রঃ টেলিগ্রাফ