
এক কাপ পানি ঝাঁকি দিয়ে রেখে দিলেও মিনিটের আগেই আন্দোলন ভুলে পানি স্থির হয়ে যাবে। এবার ভাবুন অন্যবাস্তব। কোনো তরলকে টলটলিয়ে রেখে মিলিয়ন বছর পর ঘুরে এসে দেখতে পেলেন টলটলানি থামে নাই! হায়! কি ভৌত(physical) ব্যাপার!
হিলিয়াম কী কাজে লাগে? বিক্রিয়া নেই, সঙ্গী নেই, তেজ নেই- এই মরাকে দিয়ে কী হবে? ছবির উপচে পড়া তরলটা হিলিয়াম।
কোনো তরল আপনা আপনি কোনো পাত্রের দেয়াল বেয়ে উপরে উঠছে- এটা একটি বাস্তব ঘটনা, অবাক হওয়ার সাথে জেনে রাখুন এটা একটি বৈজ্ঞানিক সত্য!
এই অবস্থার নাম সুপারফ্লুইডিটি। পরম তাপমাত্রায় তিনটা সুপার- সুপারকন্ডাক্টিভিটি, সুপারফ্লুইডিটি, সুপারএটম।
তাপমাত্রা বাড়াতে বাড়াতে আমরা কতদূর সামনে যেতে পারব জানি না, কিন্তু বিজ্ঞানীরা বহু বহু বছর আগে আমরা কতটুকু পেছাতে পারব সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব করে বের করে ফেলেছেন। -২৭৩.১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর পরে তাপমাত্রাকে আর পেছানো যায় না। কেলভিন স্কেলে ০ ডিগ্রী কেলভিন, এটাই পরম তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রায় এসে সকল পদার্থের ঐ তিনটা সুপার অবস্থা এসে হাজির হয়। এই দশার একটি গর্ব করার মত নাম আছে আমাদের জন্য- বসু-আইনস্টাইন ঘনীভবন (Bose–Einstein condensation)। খুবই নিম্ন তাপমাত্রায় পদার্থের আচরণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা হয় সেই ক্ষেত্রটার নাম ক্রায়োজেনিক্স (Cryogenics).
একদল সৈন্যবাহিনী যখন মার্চ করবে তখন তারা যেভাবেই মার্চ করুক একজন আরেকজনের সাথে সংঘর্ষ হবে না। কারণ, সৈন্যরা ঐকতানে থাকবে। এই ঐকতানটাকে বিজ্ঞানে বলি সমদশা। সমদশা কারণে প্রত্যেকের আর আলাদা অঙ্গভঙ্গি থাকছে না, কেবল একজনের ক্রিয়া দেখে আপনি পুরো সৈন্যদলটার ক্রিয়াতথ্য পেয়ে যাচ্ছেন। যখনই পরম তাপমাত্রায় চলে আসবে পদার্থ তখন তার সবগুলো পরমাণু সমদশায় চলে আসবে। পুরো পদার্থটা কাজ করবে একটা পরমাণু হিসেবে। এর নাম সুপারএটম।
একটি সাপেক্ষে অন্য পরমাণু যেহেতু স্থির থাকবে তাই এই অবস্থায় আসলে কোনো কম্পন থাকে না। পরমাণুগুলোর কম্পন একেবারেই থাকে না বলে এর আর শক্তি কমানো সম্ভব না। তাই এটা হল তাপমাত্রার নিম্নসীমা। এ অবস্থায় কোন ঘর্ষণও কাজ করবে না। পরিষ্কারভাবে জিরো কেলভিনে পদার্থের ঘর্ষণও পই পই জিরো, টেন্ডস টু জিরো না।
যুগপৎভাবে, অতিপরিবাহীতাও (Superconductivity) চলে আসবে। মানে কোনো তড়িৎক্ষয় হবে না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফ্রিজ কোনটা জানেন?
সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার। সুপারকন্ডাক্টিভিটি ধর্মকে ব্যবহার করার জন্য কোলাইডারে তাপমাত্রা কমিয়ে রাখা হয়। এই কাজটি করতে গিয়ে আমরা মানুষেরা কোলাইডারে মহাশূন্যের গড় তাপমাত্রাকেও হারিয়ে দিয়েছি। মহাশূন্যের চেয়ে সার্নের কোলাইডার বেশি শীতল, এলএইচসির প্রধান চুম্বকগুলো কাজ করে ১.৯ কেলভিনে (-২৭১.৩°সে.) আর মহাশূন্যের তাপমাত্রা, ২.৭ কেলভিন (-২৭০.৫°সে.)। আর শীতল রাখার কাজটা করা হয় হিলিয়ামকে দিয়ে, হিলিয়ামকে সবচেয়ে সহজে (অন্য পদার্থের হিসাবের পর অবশ্যই ) আমরা শীতল করতে পারি।
এই প্রযুক্তিটা পাবার জন্য মানুষকে এর পেছনের বিজ্ঞানের জন্য খাটতে হয়েছে শয়েক বছর।
বিজ্ঞান কোনো যন্ত্র নয়, বিজ্ঞান হল একটি ধারণা, একটি চিন্তা, একটি কারণ, আর আপনার যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ।