দুই দুইটি পারমানবিক চুল্লি বিষ্ফোরনের পর এখন সবার চোঁখ তৃতীয় ক্ষতিগ্রস্ত পারমানবিক চুল্লির দিকে। ভূমিকম্প ও তারপর সুনামী এবং বর্তমানে পারমানবিক পরিস্থিতি জাপানের অবকাঠামো ও জীবন যাত্রায় স্থবিরতা এনে দিয়েছে। বিভিন্ন গণ মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা আজকের জাপানের পারমানবিক পরিস্থিতি জানাচ্ছি।
সাম্প্রতিক খবর
তৃতীয় নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরটিকে ঠান্ডা রাখার জন্য প্রতিদিন ৫০টন বা ১২০০০ গ্যালন পানি ঢালা দরকার। গতকাল সামরিকবাহিনীর লোকজন ৮০০০ গ্যালন পানি ঢালতে সক্ষম হন। প্লান্টগুলোকে ঠান্ডা রাখার জন্য আলাদাভাবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
রিয়েক্টর চার-এও পানি ঢালার পরামর্শ দেন আমেরিকার পারমানবিক গবেষক। সেখান থেকেও রেডিয়েশনের কারনে কমীর্দেরকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
মার্কিন পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, জাপানে তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পারমাণবিক কেন্দ্রের ছবিতে দেখা গেছে, অব্যাহত বিস্ফোরণের পর কেন্দ্রের ভবনগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে জাপানের পারমাণবিক সংস্থা জানিয়েছে, তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণের মাত্রা অব্যাহতভাবে কমছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, জাপানকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামোগত সহায়তা দিতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত রয়েছে। জাপানের মন্ত্রিপরিষদের মুখ্যসচিব ইউকিও এদানো আজ বৃহস্পতিবার জানান, ওবামা টোকিওতে মার্কিন পরমাণু বিশেষজ্ঞ পাঠানোরও প্রস্তাব দেন।
তেজস্ক্রিয়তায় কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
জাপানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফুকুশিমা কেন্দ্রের কাছে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ মিলিসিভার্ট রেকর্ড করা হয়েছে। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড ওয়াকফোর্ড জানান, এই মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা মানবদেহে প্রভাব ফেলার আশঙ্কা তেমন নেই। এর পরও এতে অস্থিমজ্জায় রক্তকোষের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ক্যানসারের ঝুঁকি দুই থেকে চার শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।
ওয়াকফোর্ড বলেন, বর্তমান মাত্রার তেজস্ক্রিয়তায় কেবল ওই কেন্দ্রে কর্মরত কর্মীদের স্বল্পমাত্রায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে আশপাশের এলাকার লোকজনের জন্য কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে।
স্বল্পমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ লক্ষণ হলো ঘণ্টা খানেকের মধ্যে চরম বিতৃষ্ণা বোধ ও বমি শুরু হবে। এরপর আস্তে আস্তে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা ও জ্বর আসবে। প্রাথমিক লক্ষণগুলো কেটে যাওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ মনে হতে পারে অসুস্থতা আর নেই। কিন্তু এরপর আবার নানা লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হলে আগের লক্ষণগুলোই প্রাথমিকভাবে দেখা যাবে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী আকার নেবে। সেক্ষেত্রে জ্বর ও রক্তবমি হবে। পরবর্তী সময়ে মাথার চুল পড়ে যাওয়া, শরীরে ক্ষত সৃষ্টি এবং ক্ষত সহজে সারবে না। এ থেকে ক্যানসার হতে পারে। তবে সব কিছু নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তি কতক্ষণ ও কী মাত্রার তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে ছিলেন তার ওপর। তেজস্ক্রিয়তা দীর্ঘস্থায়ীভাবে পাকস্থলী ও অস্থিমজ্জার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এ ছাড়া সাধারণভাবে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ৫০ থেকে ১০০ মিলিসিভার্ট হলে রক্তের রসায়নে পরিবর্তন, ৫০০ মিলিসিভার্টে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিরাগবোধ, ৭০০ মিলিসিভার্টে বমি, ৭৫০ মিলিসিভার্টে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে চুল পড়ে যাওয়া, ৯০০ মিলিসিভার্টে ডায়রিয়া, এক হাজার মিলিসিভার্টে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, চার হাজার মিলিসিভার্টে চিকিৎসা না হলে দুই মাসের মধ্যে মৃত্যু, ১০ হাজার মিলিসিভার্টে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু এবং ২০ হাজার মিলিসিভার্টের বেশি হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়বে এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যেতে পারে।
এ ছাড়া তেজস্ক্রিয়তায় শিশুদের ক্ষতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর আশপাশের এলাকার শিশুরা ব্যাপক মাত্রায় গলগ্রন্থির ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিল।
তেজস্ক্রিয়তার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আরও বেশি তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত জামা-কাপড় ও জুতা পরিবর্তন করতে হবে। এরপর সাবান ও পানি দিয়ে শরীর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অস্থিমজ্জার ক্ষতি রোধে রক্তের শ্বেতকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পেয়ে অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ রোধ করার জন্যও বাজারে সুনির্দিষ্ট ওষুধ আছে।
ছবি
তথ্য ও ছবি সূত্রঃ
নিউ ইয়র্ক টাইমস, প্রথম আলো, রয়টার্স, বিবিসি ও এএফপি
হুম। অনেক তথ্য। তাহলে তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত ব্যাক্তির অবস্থা খুবই করুন। ধন্যবাদ টিউটো ভাই পোষ্ট টির জন্যে।
প্রকৃত পক্ষেই বিষয়টা ভয়ানক। আপনাকেও ধন্যবাদ রলিন।
সময়ের অভাবে পত্রিকা পড়াই হয় না। আসলেই জাপানের অবস্খা অত্যন্ত খারাপ। 🙁 আল্লাহ জাপানবাসীদের রক্ষা করুন।
ধন্যবাদ তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্টটির জন্য 🙂
পারমানবিক চুল্লি যে কত ভয়ানক হতে পারে তা এখন বুঝা যাচ্ছে। বিশ্ববাসির উচিৎ পারমানবিক চুল্লি সুনির্দিষ্ট দূরে দূরত্বে স্থাপন করা।
ধন্যবাদ, খবরগুলো জানানোর জন্য। এরকম আরো খবরের অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ, আশা করি, খবরগুলো শেয়ার করবো।
জাপানবাসিরা এখন অনেক বিপদের মধ্যে জীবন যাপন করছে….
এখন মনে হচ্ছে প্রযুক্তিহীন থাকা সত্তেও আমার ওদের চেয়ে নিরাপদ আছি।
আমার মতে পৃথিবী যত উন্নত হচ্ছে তত মানব জাতি বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 🙁 জাপানই হলো এখন একটি উদাহারণ 🙄
আসুন সবাই দোয়া করি জাপানের আসহায় মানুষ গুলোর জন্য।
আল্লাহ! জাপানবাসীদের রক্ষা করুন, আমীন।
আমীন
রাসিয়ার সাথে বাংলাদেশের একটি আলোচনা হাঁটিহাঁটি পা-পা করে এগুচ্ছিলো পারমানুবিক বিদ্যৎক কেন্দ্রের বিষয়ে। সেটার মনে হয় আর কোনো চান্স নাই।
ওহ খুব খারাপ লাগতেছে ওদের যে এখন কত বিপদ:cry:
আল্লাহ রক্ষা করো।