নাসা চেয়েছিল পৃথিবীর ছবি তুলবে। ক্যামেরাটা তাই তাক করা হলো ‘নীলাভ মলিন বিন্দু’র দিকে। ক্লিকও করল ‘ডিসকভর’ উপগ্রহের ক্যামেরা এপিক। ছবি উঠল মাতৃধরণীর। কিন্তু সেই ছবিতে মাথা ঢুকিয়ে দিল ‘অ্যালুমিনিয়ামের চাঁদ’। নাসা বলছে, এ হলো লুনার ফটোবম্ব।
জানতে চেয়েছিলাম স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) শিক্ষক ফিরোজ চৌধুরীর কাছে। টেলিফোনে তাৎক্ষণিক জবাবে তিনি ভাবলেন, ‘ছবিদূষণ’।
হ্যাঁ, প্রথমে নতুন কোনো শব্দ এমন শোনাতেই পারে। সময়ের সঙ্গে ও ধারাবাহিক ব্যবহারের মাধ্যমে সেই শব্দই এক সময় শ্রুতিমধুর ও অর্থবোধক হয়ে যায়।
তাহলে ফটোবম্ব বোঝাতে আমরা কি ‘ছবিদূষণ’ই ব্যবহার শুরু করব? ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী সম্মতিসূচক সাড়া দিলেন। সেই সঙ্গে ‘আরও ভাবার আছে’, বললেন সাংবাদিকতার এই শিক্ষক।
এই লেখক অবশ্য প্রতিবেদনটি তৈরির সময় ফটোবম্বের জায়গায় পরিভাষা হিসেবে ‘চিত্রদুষ্টুমি’ কথাটা বেছে নিয়েছেন। এবং তা যে খুবই যুক্তিনির্ভর ও ভাবনাপ্রসূত এমন নয়। আমরা এ নিয়ে নিশ্চয়ই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাব। এখন মূল খবরটিতে আসা যাক।
ডিপ স্পেস ক্লাইমেট অবজারভেটরি (ডিএসসিওভিআর; বলা যেতে পারে, ডিসকভার)। পৃথিবী থেকে ১৬ লাখ কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘোরে এই কৃত্রিম উপগ্রহটা। অবস্থান তাই পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে। এর সঙ্গে রয়েছে এপিক নামে একটি ক্যামেরা। পুরো নাম আর্থ পলিক্রোমাটিক ইমেজিং ক্যামেরা। এটি চার মেগাপিক্সেল সিসিডি ক্যামেরা ও টেলিস্কোপ। ডিসকভরের মূল কাজ সৌরঝড় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা। পাশাপাশি পৃথিবীর ওজোন স্তুর, মেঘের উচ্চতা ইত্যাদির তথ্যচিত্র ধারণ করে এপিক। সেসব নিয়ে গবেষণা করেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা।
গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে ডিসকভর প্রকল্পের বিজ্ঞানী অ্যাডাম জাবো বলেছেন, ৫ জুলাই চাঁদের চিত্রদুষ্টুমিটা ধরা পড়েছে। পৃথিবীর সামনে এসে হাজির হয় চাঁদ। তখন ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে পৃথিবীকে পাক খাচ্ছিল সে। তখন কার্ল সাগানের ‘নীলাভ মলিন বিন্দু’র বুকে চাঁদকে একটা বড় বিবর্ণ টিপের মতো দেখা যাচ্ছিল।
এর আগেও এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে অঞ্জন দত্তের ‘ওই অ্যালুমিনিয়ামের চাঁদ’। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই এপিক ছবি তোলার সময় পৃথিবীর সামনে এসে হাজির হয়েছিল বাঙালির ‘চাঁদ মামা’।
বাড়িটা কত বড়
সৌরজগতে স্বঘোষিত ‘একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী’ মানুষের বাড়ি পৃথিবী। সূর্য থেকে দূরত্বের বিচারে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত (ব্যাস) হচ্ছে ১২ হাজার ৭৪২ কিলোমিটার। সূর্যের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বড়। কিন্তু মানুষের মাতৃগ্রহকে ‘নীলাভ মলিন বিন্দু’ বলে অভিহিত করেছিলেন মার্কিন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ও জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞানের লেখক কার্ল সাগান।
১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। নাসার ভয়েজার-১ মহাকাশযান তখন সূর্য থেকে ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূরে চলে গেছে। সাগান অনুরোধ করলেন, ভয়েজারের ক্যামেরাটা যেন একবার পৃথিবীর দিকে তাক করানো হয়, একটা ছবি তোলানো হয়। তা-ই করা হয়েছিল। ওই ছবিতে মহাকাশের গভীর অন্ধকারে একটা বাদামি পট্টির দেখা মেলে। এই পট্টির মাঝামাঝিতে একটা বিন্দু দেখা যায়। নীলাভ সে বিন্দু। বালিসদৃশ ওই পুঁচকে বিন্দুটাই পৃথিবী। সাগানের ভাষায় পৃথিবীটা হলো ‘নীলাভ মলিন বিন্দু’।
তথ্যসূত্র : নাসা।