ওপেন সোর্স বা উন্মুক্ত সফটওয়্যার আজ আমাদের তথ্য প্রযুক্তি জগতের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে । সার্ভার এর জগতে রাজত্ত করতো যে ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম তা আজ অত্যন্ত ব্যাবহার বান্ধব ও বিনোদন এ ভরপুর হয়ে আমাদের ঘরের ডেক্সটপে নিজের জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার এর দুনিয়ায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে লিনাক্স বেসড অপারেটিং সিস্টেম অ্যনড্রয়েড। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর সেক্টরে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার গুলো শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। তথ্য প্রযুক্তি দুনিয়ায় বিচরণ করেন যারা তাঁদের কাছে এই কথা গুলো হয়তো খুব বেশি নতুন মনে হবে না ।
কিন্তু থ্রিডি মডেলিং এবং অ্যানিমেশনগ্রাফিক্স ডিজাইনআর্কিটেকচারাল ভিজুয়ালাইজেশন, ভার্চুয়াল এফএক্স এর মত বিষয় গুলোতেও যে এই ওপেন সোর্স সফটওয়্যার গুলো বিশ্ব সেরা এবং অত্যন্ত দামি কমার্শিয়াল সফটওয়্যার গুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে তা হয়ত আমরা অনেকেই জানিনা।

এরকম একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ওপেন সোর্স থ্রিডি কন্টেন্ট তৈরির সফটওয়্যার এর নাম Blender যা দিয়ে আমরা একাধারে থ্রীডি মডেলিং, অ্যানিমেশন, ক্যেরেকটার মডেলিং ও অ্যানিমেশন, গেম ডেভেলপমেনট, রিগিং, fluid এবং smoke সিমুলেসন, particle সিমুলেসন, রিয়েল টাইম রেনডারিং, ক্যমেরা ট্র্যাকিং, কম্পোজিটিং এবং ভিডিও এডিটিং এর মত কাজগুলি করতে পারি। এখন আসুন আর্কিটেকচার, ইন্টেরিওর ডিজাইন, ভেহিকল মডেলিং ও ল্যন্ডস্কেপ এই সেক্টর গুলি থেকে Blender এ করা কিছু কাজের নমুনা দেখি।

ওপরের কাজগুলি থেকে Blender এর শক্তি সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাওয়া যায়। আসুন জানার চেষ্টা করি, কেন Blender ব্যবহার করবো।

১) ব্লেন্ডার একটি ফ্রি ওপেন সোর্স, থ্রিডি কন্টেন্ট তৈরির সফটওয়্যার এবং ক্রসপ্লাটফরম সাপোর্ট করে, অর্থাৎ Windows, Linux বা Mac সবখানেই চলে।

২) ব্লেন্ডার সফটওয়্যারটি “ব্লেন্ডার ফাউন্ডেশন” নামের একটি নেদারল্যান্ড ভিত্তিক অলাভজনক অর্গানাইজেশন ডেভেলপ করে এবং যেটির প্রতি ২ মাস পরপর নতুন রিলিজ বের হয়।

৩) পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করার কারণে আমরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে ইউসার কমিউনিটি বা ইউজার ফোরাম ব্যবহার না করতে পারা বা হেল্প ও সাপোর্ট না নিতে পারা। ব্লেন্ডার এর রয়েছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ইউসার কমিউনিটি “ব্লেন্ডার আর্টিস্ট” যেখানে সারা বিশ্বের লাখো থ্রিডি আর্টিস্ট তাদের কাজ ও নলেজ শেয়ার করার মাদ্ধ্যমে একটি শক্তিশালী ইউসার কমিউনিটি গড়ে তুলেছে।

৪) ২০১৩-এর জুলাই এর পরে সফটওয়্যার পাইরেসি আইন কড়াকড়ি ভাবে প্রয়োগ করার জন্য বাংলাদেশ এর ওপর আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হবে। কাজেই সামনের দিনগুলিতে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার অনেক কঠিন হয়ে উঠবে। তখন কি আমরা কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করবো একটি থ্রীডি মডেলিং সফটওয়্যার কেনার জন্য?

৫) নাকি আমরা এমন একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার শেখার চেষ্টা করবো যা দিয়ে মায়া বা থ্রিডি ম্যাক্স ব্যবহার করে যা করা সম্ভব তার প্রায় সবই করা সম্ভব। হ্যাঁ তবে প্রতিটি সফটওয়্যারেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য এবং সিমাবদ্ধতা রয়েছে।

আমাদের দেশে থ্রিডি মডেলিং এবং এনিমেশন সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উটছে আস্তে আস্তে। নতুন কাজের সুযোগও তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। আর্কিটেকচার এবং ইন্টেরিওর ডিজাইন সেক্টরে থ্রিডি মডেলিং এবং অ্যানিমেশন এর রয়েছে অনেক শম্ভাবনা। টিভি চ্যানেল গুলোর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে প্রতিনিয়ত দক্ষ ভার্চুয়াল এফএক্স আর্টিস্ট এবং থ্রিডি আর্টিস্ট এর চাহিদা তৈরি হচ্ছে যা সামনে আরও বাড়বে। এরকম একটি প্রেক্ষাপটে আমরা যদি আমাদের দেশের এই সেক্টরটির দিকে তাকাই তাহলে দেখি, যে সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করা হচ্ছে তার প্রায় সবই পাইরেটেড। কারনটি খুব সহজেই বোঝা যায়। অত্যন্ত দামি এই সফটওয়্যর গুলি আমাদের দেশে পাওয়া যায় প্রায় বিনামূল্যে।

পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষতি ও ওপেন সোর্স ব্যবহারের লাভ বিষয়ে অনেক বড়ো একটি লেখা তৈরি করা যায়। সেটি পরে কখনও হবে। আমরা যারা থ্রিডি মডেলিং এবং এনিমেশন সেক্টরে কায করছি, তারা পাইরেসি বর্জন করে আসুন Blender শিখি। নেটে Blender এর অসংখ্য ফ্রি টিউটোরিয়াল ছড়িয়ে রয়ছে। অর খুব শিঘ্রই Blender এর মানসম্মত বাংলা টিউটোরিয়াল এই সাইটেই প্রকাশ করতে পারবো আশা করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here